Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
শুক্রবার । ৮ই আগস্ট, ২০২৫ । ২৪শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

খুলনায় ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে মাদক সিন্ডিকেট, আধিপত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় হঠাৎ বেড়েছে খুন, হামলা ও অস্ত্রবাজির ঘটনা। চলতি মাসের প্রথম ৮ দিনেই ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কুপিয়ে ও গুলিতে জখম করা হয়েছে আরও ৩ জনকে। একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আতংকিত হয়ে পড়ছে নগরীর মানুষ।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত নগরীতে ৩১টি হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে যা ছিল ১৯।

মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদক-সংক্রান্ত বিরোধ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশি খুনোখুনি হয়েছে। ১১টি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক ও সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্যের বিরোধ পাওয়া গেছে। এছাড়া ইজিবাইক ও ভ্যান চুরি নিয়ে পাঁচ, প্রেমের বিরোধে পাঁচ, পারিবারিক কলহে তিন, নদীতে ভেসে আসে দুটি লাশ, চুরি দেখে ফেলায় একজন, গণপিটুনিতে একজন এবং অন্যান্য কারণে তিনজন নিহত হয়েছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত ১ আগস্ট রাতে নগরীর সবুজবাগ এলাকায় ঘরে ঢুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয় মনোয়ার হোসেন টগরকে। পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গত ৩ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ঘের ব্যবসায়ী আলামিন হাওলাদারকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে ফেলে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আওলাদ হোসেন বাদি হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায়ও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

গত ৫ আগস্ট রাত ৮টায় নগরীর সঙ্গীতা সিনেমা হলের সামনে নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) নেতা শেখ শাহাদাত হোসেনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। প্রায় ২৩ বছর কারাভোগের পর গত ৮ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ অসংখ্য মামলা ছিল। মুক্তির পর তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সারাদেশের মতো খুলনায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় তারা। এ সুযোগ নিয়েছে সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা। অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আগের অপরাধে জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে উঠতি সন্ত্রাসীরা। দিন দিন সবাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

আলোচিত ১০টি খুনের এজাহার বিশ্লেষণ ও তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীতে সশস্ত্র মহড়া, মাদক-সংক্রান্ত গণ্ডগোল ও হত্যাকাণ্ডে তিনটি সন্ত্রাসী বাহিনী জড়িত। এর মধ্যে রংমিস্ত্রি সোহেল, গোলাম হোসেন ও মনোয়ার হোসেন টগর হত্যাকাণ্ডে গ্রেনেড বাবুর বি কোম্পানির সদস্য, পঙ্গু রাসেল হত্যায় পলাশ গ্রুপ, অর্ণব হত্যায় বি কোম্পানি ও পলাশ যৌথ এবং আমিন মোল্লা বোয়িং হত্যাকাণ্ডে আশিক গ্রুপের সদস্যরা জড়িত। এ ছাড়া তদন্তে বড় শাহীন ও মাহাবুব হত্যায় জেলে থাকা চরমপন্থি নেতাদের অনুসারীদের নাম এসেছে। আলামিন হাওলাদার খুনেও একই গ্রুপ জড়িত।

কেএমপির কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘২৭টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এজাহারভুক্ত বেশির ভাগ আসামি কারাগারে। বলেন, ‘পলাশ বাহিনীর প্রধান শেখ পলাশ, সেকেন্ড ইন কমান্ড কালা লাভলু, নূর আজিম বাহিনী প্রধান নূর আজিম, আশিক বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সাগরসহ ৫৪ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

একের পর এক হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত খুলনা নগরীর মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কড়া সমালোচনা করছেন। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘অভ্যুত্থানের এক বছরেও পুলিশ বাহিনী ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ সুযোগে পলাতক সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে এবং কেউ কেউ জেল থেকে বেরিয়ে অপকর্ম করছে। পুলিশ সক্রিয় না হলে এদের প্রতিরোধ করা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘নিরস্ত্র জনগণের আস্থা পুলিশের ওপর। এ জন্য চৌকস ও দক্ষ কর্মকর্তাদের থানা পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। তাহলে বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ফিরবে।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন